জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, তাঁদের দল কোনো ভুলের ঊর্ধ্বে নয় এবং অতীতে দলের কর্মী বা সংগঠনের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে তাঁদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা দল হিসেবে দাবি করি না যে, ভুলের ঊর্ধ্বে। আমাদের কোনো আচরণ বা কর্মকাণ্ডে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে বিনা শর্তে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।”
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাস পাওয়ার রায়কে কেন্দ্র করে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
‘সত্যকে চেপে রাখা যায় না’
শফিকুর রহমান বলেন, “এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে—সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য একসময় মেঘ ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে।” তিনি আরও বলেন, “জাতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের উচিত জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “দেশের জনগণের সমর্থন পেলে আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি ও বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
‘আমরা জুলুমের শিকার হয়েছি’
জামায়াত আমির শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তাঁদের দলের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ এনে বলেন, “আমরা ভয়ংকর জুলুমের শিকার হয়েছি। আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে সাজানো মামলায়, মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কার্যত বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার করা হয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে মামলায় সুবিচার হয়েছে এবং আদালত তাঁকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন। এই মামলা পরিচালনার পেছনে সীমাহীন অনিয়ম ও জালিয়াতি ছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
‘বিচার নয়, ছিল পরিকল্পিত দমন’
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুর রহমান বলেন, “সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তাঁর আত্মজীবনীতে স্বীকার করেছেন—এই মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকার ও বিচার বিভাগের অংশ বিশেষ মিলে এসব মামলাকে বিচার নয়, বরং ঠান্ডা মাথার পরিকল্পিত দমন হিসেবে পরিচালিত করেছে।”
তিনি বলেন, “এই মামলাগুলোর মাধ্যমে শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবারও ধ্বংস করা হয়েছে। পরিবারগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।”
‘বিচারকে গণহত্যা বলা হয়েছে’
শফিকুর রহমান দাবি করেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মতামত অনুযায়ী এই মামলাগুলোকে ‘জেনোসাইড অব দ্য জাস্টিস’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “ব্রিটিশ আদালত বলেছেন, এটি ছিল বিচারের নামে গণহত্যা। আমাদের দেশের আদালত পর্যন্ত বলেছে, এটি ছিল ‘মিসকারেজ অব জাস্টিস’। মূল উদ্দেশ্য ছিল জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করা।”
তবে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিশোধ চাইনি। আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছি। দেশবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা পেলে আমরা সেই ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাজনীতির চর্চা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
0 Comments