চিকিৎসাসেবা বন্ধ, ভোগান্তিতে রোগী ও স্বজনেরা

 


জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে টানা পাঁচ দিন সেবা বন্ধ, আশার আলো নেই সংকট নিরসনে

চোখের চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ থেকে গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এসেছিলেন মিজানুর রহমান। তাঁর ভাই রাশেদুল হাসান গুরুতর চোখের সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছে তিনি দেখেন, সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ। আজ রোববারও একই চিত্র। চিকিৎসা না করিয়েই তাঁকে ফিরতে হচ্ছে।

হাসপাতালের ফটকে দাঁড়িয়ে মিজানুর বলেন, “চিকিৎসা না করিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে আবার আসতে হবে। কিন্তু সামনে ঈদ, আর সময় নেই। এখন মনে হচ্ছে আর কোনো উপায় নেই—বাড়ি ফিরতেই হবে।”

গত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে চিকিৎসক-কর্মচারীদের সংঘর্ষের জেরে গত পাঁচ দিন ধরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়ে।

রোববার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা যায়, চিকিৎসক, নার্স বা কোনো কর্মকর্তা এখনো আসেননি। তবে রোগীরা এসেছেন যথারীতি। কেউ চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ কেউ হতভম্ব হয়ে বসে আছেন ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়।

হাসপাতালের প্রধান ফটকে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য আইনুল ইসলাম বলেন, “সকাল ৮টার দিকে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। অনেক রোগী দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন। তাঁরা বিশ্বাসই করতে চান না যে হাসপাতাল বন্ধ। অনেককে ভেতরে গিয়ে নিজের চোখে দেখে তারপর ফিরে যেতে হয়।”

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০–২০০টি অস্ত্রোপচার ও তিন হাজারের বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। এখন পাঁচ দিন ধরে সব সেবা বন্ধ। অপারেশনের জন্য যারা অপেক্ষা করছিলেন, তাঁদের কষ্ট আরও বেশি।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের অনেকে বলেন, এখনো প্রায় ২৫–৩০ জন সাধারণ রোগী এবং ৬০–৭০ জন গণ-আন্দোলনে আহত রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসা মাঝপথে থাকায় তাঁরা কোথাও যেতে পারছেন না।

চাঁদপুরের মতলব থেকে এসেছেন অমল বিশ্বাস। তিনি জানান, “গত রোববার মায়ের চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। আজ আবার চিকিৎসক দেখানোর কথা ছিল। অনেক দূর থেকে এসেছি। মায়ের শরীর ভালো না, দুশ্চিন্তায় আছি।”

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, “সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল কাজ করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে চিকিৎসাসেবা ফের চালু হবে। তবে যাঁদের চিকিৎসা মাঝপথে আটকে আছে, তাঁদের কাছাকাছি অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, একটি প্রতিনিধিদল হাসপাতাল পরিদর্শন করছে এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে চিকিৎসাসেবা পুনরায় চালু করা হবে।

এদিকে, চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় হাসপাতালের গেটে রোগীদের ভিড় ও হতাশা স্পষ্ট। কেউ অস্ত্রোপচারের নির্ধারিত দিনে এসে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ আবার নতুন করে চিকিৎসা শুরু করতে চেয়েও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোগীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শত শত রোগী ও তাঁদের পরিবারকে।


Post a Comment

0 Comments